লজ্জাবতী গাছ এর ঔষধি গুণাগুণ
উদ্ভিদের নাম:- লাজ্জাবতী Lazzaboti স্হানীয় নাম: লজ্জাবতী,
সমঙ্গা, লজ্জালু, অঞ্জলিকারিকা ভেষজ নামঃ- Mimosa pudica Linn ফ্যমিলিঃ-
Leguminosae ব্যবহার্য অংশঃ-পাতা, ফুল ও সমগ্র লতা পাতা। রোপনের সময়ঃ-বছরের
সবসময় রোপণ করা যায় । উত্তোলনের সময়:- বছরের যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়।
বারো মাসই ফুল ও ফল হয়। তবে সাধারনতঃ জুলাই থেকে ডিসেম্বর মধ্যে ফুল ও ফল বেশী
হয়।প্রত্যেক শুটিতে ৩/৪ টি বীজ থাকে। ফলের মধ্যে ধূসর বর্ণের ছোট ছোট কাঁটা আছে।
আবাদী/অনাবাদী/বনজঃ- সাধারনতঃ বনজ আবস্থায় জন্মে। তবে অনেকে চাষ করে থাকে।
প্রাপ্তিস্থানঃ-উপমহাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়, বাংলাদেশে ও অসমে এর প্রাচুর্য
বেশী।
বিবরণঃ- এই গাছটি গুল্ম জাতীয় গাছ।
স্পর্ষকাতর গুল্ম লজ্জাবতী লতাটি গড়িয়ে গড়িয়ে বেড়ে যায়। এর গায়ে অসম্ভব
বাঁকা কাঁটা নীচের দিকে থাকে। প্রবাদ আছে এর ভিতর দিয়ে সাপ চালাচল করেনা।পাতার
বোঁটা এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা। পাতা গুলি ঠিক বিপরীতভাবে সন্নিবেসিত। স্পর্শ
করলেই পাতা বুঁজে যায়। পুষ্পদন্ড ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা। ফুল তুলার মত নরম ও ফিকে
লাল বর্ণের বা কিছুটা বেগুনী বর্ণের হয়।
ঔষধি গুণাগুণঃ- এই উদ্ভিদটি প্রকৃতিতে একটু ভিন্ন প্রকারের। স্পর্ষের সাথে সাথে
এটি গুটিয়ে যায় বলে এর নাম লজ্জাবতী নাম হয়েছে। এ কারনে হয়তো এর প্রতি অনেকে
আকৃষ্ট হয়। এর মাঝে হয়ত অন্য কোনো রহস্যও থাকতে পারে। এনিয়ে আরো গবেষণারও
প্রয়োজন রয়েছে। এ উদ্ভিদের অনেক ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। হাত পা জ্বালায়, অর্শ
রোগে, রক্তপিত্তে, যোনি ক্ষতে, নাড়ী সরে আসায়, আঁধারযোনি ক্ষতে, আমাশয়, দমকা
ভেদ, মল কাঠিন্যে, বিসর্পে, দাঁতের মাড়ি ক্ষতে, বগলে দুর্গন্ধ, দুষ্ট ক্ষতে,
পোড়া নারিঙ্গায়, হারিশে, কানের পুঁজে, রমনে অতৃপ্তি, মিথুন দন্ডের শৈথিল্যে,
গ্রন্থিবাত, কুজ্জতায়, সংগ্রহ গ্রহণী রোগ ইত্যাদিতে এর ঔষধী গুনাগুন রয়েছে।
হাত পা জ্বালায়ঃ- হাত পা জ্বালার সাথে জ্বরও থাকে।এটা সাধারনতঃ বর্ষা ও শরৎকালে
পিত্ত বিকারে দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে লজ্জাবতীর সমগ্রাংশ (গাছ মূল পাতা)১০ গ্রাম ৪
কাপ পানিতে সিদ্ধ ক’রে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে এই
ক্বাথটা খেলে ঋতুগত পিত্ত বিকারে ও তজ্জনিত উপসর্গের উপসম হয়। অর্শ রোগঃ- অর্শের
বলিতে জ্বালা বেশী। ঝাল না খেয়েও যেন সেই রকম জ্বালাবোধ। তার সঙ্গে রক্তস্রাবও
বেশী হোতে থাকে। এক্ষেত্রে গাছে ও মূলে ১০ গ্রাম আন্দাজ ১ কাপ দুধ ও ৩ কাপ পানি এক
সঙ্গে মিশিয়ে একত্রে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে এটা প্রত্যহ
সকাল বিকাল ২ বার খেতে হবে। ছাগলের দুধ হলে ভাল হয়। রক্তপিত্তেঃ- গলাটায় মনে হয় কাঁটা ফুঁটেছে, এর সঙ্গে একটা কাশি
আসে, আর রক্ত পড়ে, বুকে পিঠে কোনো ব্যথা নেই, এমন কি অর্শ নেই, দাস্ত হওয়ার পর
জ্বালা যন্ত্রনাও হয় না,অথচ টাটকা রক্ত পড়ে; এক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে মাত্রা
মত তৈরী করে ঐ ক্বাথটা সকালে বিকালে দুইবার খেলে রক্তস্রুতি বন্ধ হয়ে যায়।
যোনি ক্ষতেঃ- এটার প্রাথমিক স্তরে মাঝে মাঝে
অথবা প্রায় রোজই অল্প অল্প স্রাব চলতে থাকে, একটা আঁশটে গন্ধ, কখনো বা একটু লালচে
স্রাব; এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাবধান করে থাকেন-এটার পরিনামে ক্যনসার হোতে পারে। এ
ক্ষেত্রে দুধে পানিতে সিদ্ধ করা লজ্জাবতীর ক্বাথ খেলে এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
তাছাড়া গাছের ক্বাথ দিয়ে ডুস্ দিয়ে ধোয়ালে তাড়াতাড়ি সেরে যায়। ক্বাথ তৈরী
করার পদ্ধতি পূর্বে উল্লেখ আছে।
নাড়ী সরে আসায়ঃ- বহু সন্তানের জননী অথবা প্রসবের
সময় ধাত্রীর অসাবধানতায় নাড়ী সরে এসেছে, উঁচু হয়ে বসতে গেলে অস্বস্তি বোধ,
এক্ষেত্রে গাছে মূলে ১০ গ্রাম আন্দাজ গাছপাতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে
নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে এটা প্রত্যহ সকাল বিকাল ২ বার খেতে হবে। আর ঐভাবে ক্বাথ তৈরী
করে ডুস্ দেওয়া, এর দ্বারা ওটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
আঁধারযোনি ক্ষতেঃ- এই বিচিত্র রোগটি কৃষ্ণপক্ষে বেড়ে যায় আর শুক্রপক্ষে শুকোতে
থাকে; এই ক্ষতটি হয় সাধারনতঃ হাঁটুর নীচে নিম্নাংশে, আর নাহয় কুচকীর দুধারে। এ
ক্ষেত্রে মূল বাদ দিয়ে গাছ ও পাতা ১০ গ্রাম শুধু পানি দিয়ে ক্বাথ করে খেতে হয়।
এবং ঐ ক্বাথ দিয়ে মুছতে হয়। রোগ সারা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়। আমাশয়ঃ-
অনেকদিনকার পুরনো, বেগ হলে আর দাঁড়ানো যায়না, গিয়ে প্রথমে যা হোলো তারপর আর হতে
চায়না; তারপর আবার অনেকের শক্ত মলের গায়ে সাদা সাদা জড়ানো আম।এ ক্ষেত্রে
লজ্জাবতীর ডাঁটা পাতা মিলিয়ে ১০ গ্রাম সিদ্ধ করে ছেঁকে খেতে হবে।আর যাদের আমযুক্ত
গাঁজলা দাস্ত হয় তাঁরা শুধু ৫/৬ গ্রাম সিদ্ধ করে ছেঁকে ঐ পানিটা খেতে হবে। দমকা
ভেদঃ-২/৩ দিন পেট স্তব্ধ হয়ে থাকে আর্থাৎ পেট ধুম মেরে থাকে,হঠাৎ একদিন দম্কা
ভেদ হয়। যা অগ্নিমান্দাজনিত অজীর্ণ। এ ক্ষেত্রে লজ্জাবতীর শিকড়ের ছাল২/৩ গ্রামে,
এর সঙ্গে শুধুপাতা ৪ গ্রাম একসঙ্গে সিদ্ধ করে ছেঁকে পানিটা খেতে হবে।