ছোলা আমাদের দেশের অতিপরিচিত একটি ডাল। শুধুমাত্র রোজাই নয়, আজকাল
আমরা সব সময় ছোলা খাই। ছোলায় অনেক পুষ্টি রয়েছে। এটা প্রোটিন গ্রুপের মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত এবং সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন হিসেবে পরিচিত। ছোলা শরীরের বেশ প্রোটিনের
চাহিদা পূরণে সাহায্য করে থাকে। এই ডালে রয়েছে উচ্চ আঁশ; তাই এটি ডাল হিসেবে অনেক
উন্নত। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ছোলা খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা খুব ধীরে
ধীরে বাড়লে এবং ছোলার আঁশ রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করে। সেই জন্য ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে ছোলার কোনো জুরি নেই। তবে যাঁদের কিডনির
সমস্যা রয়েছে তাঁরা ছোলা একেবারেই খাবেন না। শুধুমাত্র কার্বোহাইড্রেট, আঁশ বা
প্রোটিন হিসেবে নয়, বেশ কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল হিসেবে ছোলার কোনো জুড়ি নেই। এটি
পরিপূর্ণ খাবার হিসেবেও খেতে পারেন। ছোলা থেকে বড় এবং ছোট সব পুষ্টিই পাওয়া যায়।
তবে অনেককেই দেখা যায় ছোলা না ভিজিয়ে দ্রুত সিদ্ধ করে খেতে, যা স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর। মনে রাখবেন, ছোলাকে অবশ্যই সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হয়। অথবা সেটি সম্ভব না
হলে অন্তত ছয় ঘণ্টা ছোলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে করে ছোলার বাহ্যিক কেমিকেল এবং
ফাইটিংসগুলো চলে যাবে। রোজা ছাড়াও যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁরা ছোলাটা একটি
মিল হিসেবে রাখতে পারেন। বিশেষ করে ছোলার সঙ্গে যদি টক দই মিলিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে
ফাস্ট ক্লাস এবং সেকেন্ড ক্লাস দুটো প্রোটিনই পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া যাঁরা ওজন কমাতে
চান, তাঁদের ছোলা, টক দই, সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকের ডায়েটেশিয়ানরা। কেননা
ছোলার আঁশ শরীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে আমাদের মাছ, মাংস,
দুধ, ডিম, ডাল সবই খেতে হয়। যার মধ্যে প্রাণিজ প্রোটিন ফার্স্ট ক্লাস আর সেকেন্ড
ক্লাস প্রোটিন হিসেবে আমরা ডাল ও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাঁদের রক্তে
কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাঁদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা বাদ দেওয়া যাবে না।
সেই জন্য মাছ, মাংস কমিয়ে প্রোটিনের সেই চাহিদা যদি ছোলা থেকে পূরণ করা যায় তবে
সহসাই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারবেন। এ ছাড়া ছোলা আমাদের দেশে সাধারণত
দুভাবে খাওয়া হয়। একটি হচ্ছে আস্ত ছোলা, যেটাকে আমরা অনেক সময় ভেজে খাই বা সিদ্ধ
করে খাই। আরেকটি হচ্ছে ছোলার ছাতু। আমাদের গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় ছোলাকে গুঁড়ো করে
এই ছাতু ব্যবহার করা হয়। যাঁদের ওজন বাড়ানো প্রয়োজন হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এবং
বাচ্চাদের খাবারে এই ছোলার ছাতু ব্যবহার হয়ে থাকে। রোজার সময় প্রচুর তেল দিয়ে
ছোলাকে ভুনে খাওয়া হয়। যেকোনো খাবারে অনেক পুষ্টি রয়েছে। আর এই পুষ্টি পাবেন আপনি
রান্নার ওপর। তাই খুব বেশি তেল দিয়ে ছোলা ভুনে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট করবেন না। বরং
ছোলা সিদ্ধ করে তার সঙ্গে টমেটো, শসা, কাঁচামরিচ, তার সঙ্গে একটু অলিভঅয়েল বা
সরিষার তেল মিশিয়ে নিলে সেটাই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে।