লটকন (বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana) এক প্রকার টক মিষ্টি ফল।
লটকন নানা নামে পরিচিত, যেমন- Rambai, Rambi, Mafai-farang, Lamkhae, Ra mai
ইত্যাদি।[১] গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ,
মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বানিজ্যিক চাষ হয়। লটকন বৃক্ষ ৯-১২ মিটার লম্বা হয়,
এর কান্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুং এবং স্ত্রী গাছ আলাদা; যাতে আলাদা ধরণের
হলুদ ফুল হয়, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়, যা
থোকায় থোকায় ধরে। ফলের রঙ হলুদ। ফলে ২-৫ টি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসালো
ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া হয় বা
জ্যাম তৈরি করা হয়। এর ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত
হয়।[১] এর কাঠ নিম্নমানের। ছায়াযুক্ত স্থানেই এটি ভাল জন্মে।[২] লটকনের বেশ
কয়েকটি নাম রয়েছে; যেমন- হাড়ফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, কিছুয়ান
ইত্যাদি।[২] লটকনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা পুষ্টিগুণ : লটকনে আছে প্রচুর পরিমাণে
নানা ধরনের ভিটামিন ‘বি'। এতে ভিটামিন বি-১ এবং
ভিটামিন বি-২ আছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ০৪ মিলিগ্রাম এবং ০.২০ মিলিগ্রাম। পাকা লটকন খাদ্যমানের
দিক দিয়ে খুবই সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনের কোয়ায় খাদ্যশক্তি থাকে প্রায় ৯২
কিলোক্যালরি। অবাক বিষয় হলো এতে ক্যালরি আছে আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত
কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ। লটকনে ভিটামিন ‘সি' আছে প্রচুর। সিজনের সময়
প্রতিদিন দুই-তিনটি লটকন খাওয়া মানেই আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন ‘সি'র
চাহিদা পূরণ হওয়া। এ ছাড়া এ ফলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে চর্বি, আমিষ, লৌহ এবং খনিজ
পদার্থ। উপকারিতা : লটকন খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় সহজেই। তৃষ্ণাও নিবারণ করে।
মানসিক চাপ কমায় এ ফল। এর গাছের ছাল ও পাতা খেলে চর্মরোগ দূর হয়। লটকন গাছের শুকনো
গুঁড়ো পাতা ডায়রিয়া বেশ দ্রুত উপশম হয়। এর গাছের পাতা ও মূল খেলে পেটের পীড়া ও
পুরান জ্বর নিরাময় হয়। এমনকি গনোরিয়া রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এ ফলের বীজ।
তবে এ ফল বেশি মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। তাতে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে। সিজনের
সময় প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়। এ ফল মুখের রুচি বাড়ায়। লটকন শিশু ও
মেয়েদের প্রিয় ফল।